Skip to main content

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

 রাতের নিস্তব্ধতা মুমিন নারীর জন্য এক বিশেষ উপহার। যখন দুনিয়ার সব কোলাহল থেমে যায়, তখন মহান আল্লাহর সাথে একান্তে কথা বলার, নিজের দুঃখ-কষ্ট পেশ করার এবং হৃদয়ের গভীর থেকে দোয়া করার এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়। আর এই সুযোগের সবচেয়ে সুন্দর রূপ হলো ‘সালাতুত তাহাজ্জুদ’।

অনেক বোনেরাই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে আগ্রহী হন, কিন্তু এর নিয়ম বা মহিলাদের জন্য বিশেষ কোনো বিধান আছে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন। এই পূর্ণাঙ্গ গাইডটি বিশেষভাবে আমাদের মা ও বোনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সব প্রশ্নের সহজ সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

পুরুষ ও মহিলাদের তাহাজ্জুদ কি ভিন্ন?

প্রথমেই একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন—তাহাজ্জুদ নামাজের মূল নিয়ম, রাকাত সংখ্যা বা পঠিতব্য দোয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য শুধু পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে। যেমন:

  • জামাত: পুরুষদের জন্য মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের فضیلت থাকলেও, মহিলাদের জন্য নিজ ঘরে ইবাদত করাই উত্তম। তাহাজ্জুদ যেহেতু একটি নফল ইবাদত, তাই এটি নারীরা ঘরে একাকী আদায় করবেন, এর জন্য জামাতের কোনো প্রয়োজন নেই।

  • সুবিধা: ঘরে পড়ার কারণে নারীরা তুলনামূলক বেশি সুবিধা ও গোপনীয়তা পান, যা এই ইবাদতের জন্য খুবই সহায়ক।

তাহাজ্জুদ নামাজের প্রস্তুতি

গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার জন্য সামান্য প্রস্তুতির প্রয়োজন।

  1. দৃঢ় ইচ্ছা: রাতে ঘুমানোর আগেই মনে মনে তাহাজ্জুদের জন্য ওঠার দৃঢ় ইচ্ছা বা নিয়ত করুন।

  2. অ্যালার্ম: প্রয়োজনে মোবাইলে বা ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন।

  3. পবিত্রতা: ঘুম থেকে উঠে পবিত্রতার সাথে অযু সম্পন্ন করুন।

  4. উপযুক্ত স্থান: ঘরের একটি শান্ত, পরিষ্কার ও নিরিবিলি স্থান নামাজের জন্য বেছে নিন, যেখানে মনোযোগ भंग হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম (ধাপে ধাপে)

অন্যান্য নফল নামাজের মতোই তাহাজ্জুদের নিয়ম অত্যন্ত সহজ।

১. সময়

এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের সময়। তবে সবচেয়ে উত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ রাত ২টার পর থেকে ফজরের আযানের আগ পর্যন্ত।

২. রাকাত সংখ্যা

  • সর্বনিম্ন: ২ রাকাত।

  • উত্তম: ৮ রাকাত। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাধারণত ৮ রাকাত পড়তেন।

  • সামর্থ্য অনুযায়ী: আপনি ২, ৪, ৬, ৮ বা ১২ রাকাত—যেকোনো সংখ্যায় পড়তে পারেন। রাকাত সংখ্যার চেয়ে নামাজের একনিষ্ঠতা ও মনোযোগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

৩. নিয়ত

মনে মনে ‘আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নফল নামাজ পড়ছি’—এই ইচ্ছা পোষণ করাই নিয়ত। মুখে উচ্চারণ করা বাধ্যতামূলক নয়।

৪. নামাজ আদায়ের পদ্ধতি

  • ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নামাজ শুরু করুন।

  • প্রথম রাকাতে সানা, সূরা ফাতিহার সাথে আপনার জানা যেকোনো একটি সূরা (বা কয়েকটি আয়াত) পড়ুন। তাহাজ্জুদে দীর্ঘ ক্বিরাত বা লম্বা সূরা পড়া মুস্তাহাব।

  • এরপর স্বাভাবিক নামাজের মতো রুকু ও সিজদা করুন। সিজদায় বেশি সময় ধরে তাসবিহ পড়ুন এবং মনে মনে দোয়া করুন।

  • দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়ুন এবং নামাজ সম্পন্ন করে সালাম ফিরান।

  • এভাবে দুই দুই রাকাত করে আপনার নির্ধারিত রাকাত সংখ্যা পূর্ণ করুন।

৫. দোয়া

তাহাজ্জুদের মূল روح হলো দোয়া। নামাজ শেষে হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনার মনের সব কথা বলুন। নিজের জন্য, স্বামী, সন্তান, বাবা-মা এবং পুরো উম্মাহর জন্য দোয়া করুন। এই সময়ে দোয়া কবুল হয়।

মহিলাদের জন্য কিছু বিশেষ প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১: মাসিক বা পিরিয়ডের সময় কি তাহাজ্জুদ পড়া যাবে?

উত্তর: না, মাসিক অবস্থায় কোনো প্রকার নামাজ (সালাত) পড়া জায়েজ নেই। তবে আপনি এই সময়ে তাহাজ্জুদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন না। রাতের ওই সময়ে ঘুম থেকে উঠে, অযু করে নির্দিষ্ট জায়গায় বসে আপনি তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), দরুদ শরিফ পাঠ করতে পারেন এবং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে দোয়া করতে পারেন। এর মাধ্যমেও আপনি তাহাজ্জুদের আধ্যাত্মিকতা ও সওয়াব লাভ করবেন, ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন ২: ঘরোয়া কাজ ও সন্তানদের সামলে কিভাবে তাহাজ্জুদ পড়ব?

উত্তর: আল্লাহ আপনার পরিস্থিতি সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। আপনাকে ৮-১২ রাকাত পড়তে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি যদি সন্তানদের বা পরিবারের দায়িত্বের কারণে ক্লান্ত থাকেন, তবে শুধু দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। আপনার এই ত্যাগ ও সামান্য চেষ্টাই আল্লাহর কাছে অনেক বড়।

আপনার জন্য একটি বার্তা

একজন নারী হিসেবে আপনার কাঁধে হয়তো স্ত্রী, মা, কন্যা বা কর্মজীবীর বহু দায়িত্ব। এই সমস্ত দায়িত্ব পালনের পর রাতের গভীরে আরামের ঘুম ত্যাগ করে আল্লাহর জন্য দাঁড়ানো— নিঃসন্দেহে একটি বিশাল ত্যাগের কাজ।

বিশ্বাস করুন, আপনার এই রাতের নীরব প্রার্থনাগুলোই হয়তো আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে উঠবে। তাই হতাশ না হয়ে আজ রাত থেকেই শুরু করুন, দুটি রাকাত দিয়ে হলেও। আল্লাহ আপনার প্রতিটি চেষ্টাকে কবুল করুন। আমিন।

Comments

আরও দেখুন

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ?

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ? যদি বস্তুর ওজন বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজনের চেয়ে বেশী হলে বস্তুটি তরলে ডুবে  যাবে এবং বস্তুর ওজনের চেয়ে বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজন বেশী হলে বস্তুটি তরলে ভেসে থাকবে। তাহলে লোহার টুকরা পানিতে ভাসবে না কেননা লোহার টুকরা দ্বারা অপসারিত পানির ওজন লোহার টুকরার চেয়ে অনেক কম। লোহার জাহাজের ভিতরটা ফাঁপা বলে জাহাজ যে আয়তনের পানি অপসারণ করে তার ওজন জাহাজের ওজনের চেয়ে বেশী। তাই লোহার জাহাজ পানিতে ভাসে।     

চশমা আবিষ্কার

  ভারতীয় স্থপতি দেবনারায়ণের হাতে বিশ্বের প্রথম চশমা তৈরি হয়। এমনটাই দাবি করছেন ঋষিকুমার আগরওয়াল।  চশমা প্রসঙ্গে আদি শঙ্করাচার্যের লেখা অপরোক্ষানুভুতির ৮১তম শ্লোকে বলা হয়েছে- ‘ঠিক যেমন উপনেত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে সব খুব ছোট বস্তুকে/ বড় দেখা যায়, তেমনি ..’ মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে শুরুর থেকে জেনে নিন- আধুনিক চশমার উদ্ভাবক দেশ হিসেবে সাধারণভাবে ইতালির নাম উচ্চারিত হয়। দূরের জিনিসকে চোখের নাগালে নিয়ে আসার জন্য আতস কাচের ব্যবহার করার নজির দ্বাদশ শতকে ইতালিতে পাওয়া গিয়েছিল। বলা হয়, ১২৮৬ সাল নাগাদ ইতালিরই জিওর্দানো দা পিসা নামে জনৈক ব্যক্তি প্রথমবারের মতো চশমা তৈরি করেন। ১৭২৭ সালে আধুনিক চশমার প্রাথমিক নকশা তৈরি করেন ইতালিরই গিরোলামো সাভোনারোলা। পরবর্তীকালে সাভোনারোলার নকশার সূত্রে চশমা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয় এবং তা ধীরে ধীরে আধুনিক রূপ পায়। তবে চশমার উদ্ভাবন নিয়ে ইউরোপিয়ানদের এই দাবী কতটা যথার্থ, তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কারণ, সমসাময়িক এবং আরও পুরনো কিছু হিন্দু সাহিত্যে চশমার প্রসঙ্গ এর আগেই এসেছে। তাহলে কি চশমার জন্ম ভারতে! ‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথ্যালমোলজি’তে ১...

Bhuter Golpo - ভুতের গল্প - অন্ধকার রাত্রি

বয়সে ছোট হোক বা বড়   Bhut   নামটা শোনা মাত্রই আমাদের মনের মধ্যে একটা আলাদা শিহরন বা ভয়ের সৃষ্টি। অথচ মনের মধ্যে শত ভয় থাকা সত্ত্বেও আমরা   Bangla Bhuter Golpo   শুনতে ছাড়তাম না। ছোট বেলায় যেমন দাদু কিংবা ঠাকুমার কাছ থেকে আমরা নানা ধরনের   Vuter Golpo   শুনতাম। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আমরা সবাই কাজের মধ্যে এত ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছি যে কারো কাছে গল্প শোনানোর সময় হয়ে ওঠেনা। তাই আজকে আমার আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একটি সত্যি কারের ভূতের গল্প। গল্প টিকে ৮ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তারই প্রথম ভাগটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আরও   Bengali Love Story   এবং   Funny Jokes in Bengali   পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, আশাকরি গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। Bangla Vuter Golpo Online Reading | ভয়ঙ্কর ভূতের কাহিনি আজকের গল্প - অন্ধকার রাত্রি পর্ব - প্রথম রায় সাহেব থাকেন কলাবাগানে। অনেকখানি ভেতরের দিকে। দেয়ালঘেরা তিন কামরার একতলা একটা বাড়ি। আশেপাশে ছয়-সাততলা বিশাল বাড়ি ঘর উঠে গেছ...

গাওয়া ঘি কাকে বলে? বাসায় কীভাবে খাঁটি ঘি বানানো যায়?

  খাঁটি ঘি কে গাওয়া ঘি বলে। উপকরনঃ দুধের সর- ৫ কেজি পরিমাণ ঠাণ্ডা পানি- ২.৫ লিটার ঘি তৈরির জন্য যা লাগবে- মাটির পাত্র বা মালশা- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) শিল-পাটা- (সর বাটার জন্য) কাঠের চামচ বা খুন্তি- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) প্রনালিঃ ১. প্রথমে দুধের সর নিয়ে নিন আর দুধের সর বাটার জন্য একটি পরিষ্কার শিল-পাটা নিন। এরপরে দুধের সর অল্প পরিমাণে করে শিল-পাটাতে নিয়ে বাটতে থাকুন। বাটার সময় পানি দেয়া যাবেনা। সরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই একবারে সবটুকু একসাথে বাটতে যাবেন না। অল্প অল্প করে সর নিয়ে বেটে নিতে হবে। ২. এবার একটি মাটির পাত্র বা মালশা নিয়ে নিন। তাতে বাটা সর থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে কাঠের চামচ বা খুন্তি দিয়ে ঘুটতে থাকুন। এই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্ভব ততো দ্রুত করতে হবে। ৩. ভাল করে ঘুটা হয়ে গেলে সর থেকে ক্রিম তৈরি হবে। এভাবে বাকি সর থেকেই ক্রিম তৈরি করে নিন। ৪. ক্রিম তৈরি হয়ে গেলে এর মধ্যে ঠাণ্ডা পানি দিতে হবে। ক্রিমের পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিতে হবে।পানি দিয়ে ঘুঁটার পরে ক্রিম থেকে সাদা দুধের মত পানি বের হয়ে ক্রিম পরিষ্কার হয়ে ঘন ডো এর মত উপরে ভেসে উঠতে থাকবে। যখন ক্রিমের সবটুকু ডো...

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য কি?

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য আছে। এরা উভয়ই ছাগলের পুরুষ প্রজাতি তবে জন্মের কিছুদিন পরে যেসব পুরুষ লিঙ্গের ছাগলের অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেওয়া হয় সে সব শাবককেই খাসি বলা হয়। ... আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। আর এর কারন হল অন্ডকোষ কাটলে এরা প্রজনন অক্ষম হয়, ফলে মনযোগ দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফলে খাসি মোটাতাজা হয় এবং খাসির মাংস সুস্বাদু হয়। আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। পাঠা মূলত লবণের ঘাটতি বা চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নিজের ত্যাগকৃত মূত্র নিজেই পান করে থাকে, অনেক সময় উত্তেজনা বসতও সে এই কাজ করে। আর মাদি ছাগলকে আকর্ষিত করতে পুরুষ ছাগল বা পাঠা এর শরির থেকে একটি ক্যামিকেল "4-ethyloctanal" নিঃসরণ করে যা বাতাসে এসে "4-ethyloctanoic acid" এ পরিণত হয় এবং উৎকট গন্ধ ছড়ায় যা অনেকেরই অপছন্দ। এই গন্ধ পাঠার মাংসেও থাকে যার ফলে পাঠার মাংস তেমন জনপ্রিয় না। মাদী ছাগলও গোশতের খুব ন...