Skip to main content

চশমা আবিষ্কার

 ভারতীয় স্থপতি দেবনারায়ণের হাতে বিশ্বের প্রথম চশমা তৈরি হয়। এমনটাই দাবি করছেন ঋষিকুমার আগরওয়াল। চশমা প্রসঙ্গে আদি শঙ্করাচার্যের লেখা অপরোক্ষানুভুতির ৮১তম শ্লোকে বলা হয়েছে- ‘ঠিক যেমন উপনেত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে সব খুব ছোট বস্তুকে/ বড় দেখা যায়, তেমনি ..’

মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে শুরুর থেকে জেনে নিন-

আধুনিক চশমার উদ্ভাবক দেশ হিসেবে সাধারণভাবে ইতালির নাম উচ্চারিত হয়। দূরের জিনিসকে চোখের নাগালে নিয়ে আসার জন্য আতস কাচের ব্যবহার করার নজির দ্বাদশ শতকে ইতালিতে পাওয়া গিয়েছিল। বলা হয়, ১২৮৬ সাল নাগাদ ইতালিরই জিওর্দানো দা পিসা নামে জনৈক ব্যক্তি প্রথমবারের মতো চশমা তৈরি করেন। ১৭২৭ সালে আধুনিক চশমার প্রাথমিক নকশা তৈরি করেন ইতালিরই গিরোলামো সাভোনারোলা। পরবর্তীকালে সাভোনারোলার নকশার সূত্রে চশমা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয় এবং তা ধীরে ধীরে আধুনিক রূপ পায়। তবে চশমার উদ্ভাবন নিয়ে ইউরোপিয়ানদের এই দাবী কতটা যথার্থ, তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কারণ, সমসাময়িক এবং আরও পুরনো কিছু হিন্দু সাহিত্যে চশমার প্রসঙ্গ এর আগেই এসেছে। তাহলে কি চশমার জন্ম ভারতে!

চশমা আবিষ্কার

‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথ্যালমোলজি’তে ১৯৭১ সালে প্রকাশিত ঋষিকুমার আগরওয়ালের ‘অরিজিন অফ স্পেকটাকলস ইন ইন্ডিয়া’ প্রবন্ধটিতে দাবী করা হয়, শ্রীলঙ্কায় থাকাকালীন ভারতীয় স্থপতি দেবনারায়ণের হাতে বিশ্বের প্রথম চশমা তৈরি হয়। এক বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের সূত্রে ভারতের হিন্দু রাজ্য বিজয়নগর থেকে দেবনারায়ণ ভুবন ঐক্যবাহু-৪ (১৩৪৪-১৩৫৩)-এর রাজত্বকালে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন। চশমা নির্মাণের কৌশল তাঁর জানা ছিল। আর তার সাহায্যেই তিনি চশমা তৈরি করেছিলেন।

চশমা আবিষ্কার

প্রবন্ধটিতে বৈশ্বারয় (১৪৪৬-১৫৩৯) সম্পর্কে বলতে গিয়ে কবি সোমনাথের প্রসঙ্গ এসেছে। বলা হয়েছে, কবি সোমনাথ সংস্কৃতে লিখেছিলেন যে, বৈশ্বারয় ১৫২০ সালে বিজয়নগরের অধিপতি কৃষ্ণদেব রায়ের (১৩৩৬-১৬৪৬) রাজদরবারে চশমার সাহায্যে একটি বই পড়ে শোনান। আরও একটু পেছন দিকে হাঁটলেও এই ধরনের সমর্থন মিলছে। যেমন, অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আদি শঙ্করাচার্যের (৭৮৮-৮২০) ভাষ্যে উপনেত্র বা লেন্সের উল্লেখের কথা লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি। সেই ভাস্য থেকে অন্তত এটা প্রমাণিত হয় যে, ভারতে সেই যুগে চশমা কিংবা আতস কাচের ব্যবহার ছিল। লেখাটিতে ‘উপ-লোচন’ শব্দের প্রয়োগ লক্ষ্যণীয়। মহারাষ্ট্রের কবি বামনপণ্ডিত (১৬৩৬-৯৫)ও ‘উপ-নেত্র’ শব্দটি ব্যবহার করতেন। সংস্কৃত ভাষায় শব্দের আগে ‘উপ’ অব্যয় ব্যবহৃত হয়। নৈকট্য বা সাদৃশ্য বা প্রতিকল্প বোঝাতে শব্দের আগে ‘উপ’ বসানোর রেওয়াজ আছে। যেমন, উপনির্বাচন, উপপ্রধান, উপরাষ্ট্রপতি ইত্যাদি। প্রবন্ধটিতে দক্ষিণ ভারতে তাঞ্জোরের নিকটবর্তী এক জনপদে চশমার লেন্স তৈরি করার জন্য কোয়ার্টজ ক্রিস্টালের ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে।

সম্ভবত এর পরে হিন্দু গণিতশাস্ত্রের মতোই আরবদের হাত ধরে লেন্সের ব্যবহার এবং প্রাচীন হিন্দু শল্যবিদ সুশ্রুতের চক্ষুসংক্রান্ত চিকিংসা পদ্ধতি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এই দাবীর সমর্থনে ১৯০৭ সালে অধ্যাপক বার্থোল্ড লফারের উক্তি স্মরণযোগ্য। চশমার ইতিহাস প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘.. দি ওপিনিয়ন দ্যাট স্পেকটাকলস্ অরিজিনেটেড ইন ইন্ডিয়া আর্লিয়ার দ্যান ইউরোপ ইজ অফ দি গ্রেটেস্ট পসিবিলিটি অ্যান্ড দ্যাট স্পেকটাকলস্ মাস্ট হ্যাভ নোন ইন ইন্ডিয়া আর্লিয়ার দ্যান ইন ইউরোপ।’

কৃতজ্ঞতা- ছবির জন্য গুগল

Comments

আরও দেখুন

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ?

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ? যদি বস্তুর ওজন বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজনের চেয়ে বেশী হলে বস্তুটি তরলে ডুবে  যাবে এবং বস্তুর ওজনের চেয়ে বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজন বেশী হলে বস্তুটি তরলে ভেসে থাকবে। তাহলে লোহার টুকরা পানিতে ভাসবে না কেননা লোহার টুকরা দ্বারা অপসারিত পানির ওজন লোহার টুকরার চেয়ে অনেক কম। লোহার জাহাজের ভিতরটা ফাঁপা বলে জাহাজ যে আয়তনের পানি অপসারণ করে তার ওজন জাহাজের ওজনের চেয়ে বেশী। তাই লোহার জাহাজ পানিতে ভাসে।     

Bhuter Golpo - ভুতের গল্প - অন্ধকার রাত্রি

বয়সে ছোট হোক বা বড়   Bhut   নামটা শোনা মাত্রই আমাদের মনের মধ্যে একটা আলাদা শিহরন বা ভয়ের সৃষ্টি। অথচ মনের মধ্যে শত ভয় থাকা সত্ত্বেও আমরা   Bangla Bhuter Golpo   শুনতে ছাড়তাম না। ছোট বেলায় যেমন দাদু কিংবা ঠাকুমার কাছ থেকে আমরা নানা ধরনের   Vuter Golpo   শুনতাম। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আমরা সবাই কাজের মধ্যে এত ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছি যে কারো কাছে গল্প শোনানোর সময় হয়ে ওঠেনা। তাই আজকে আমার আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একটি সত্যি কারের ভূতের গল্প। গল্প টিকে ৮ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তারই প্রথম ভাগটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আরও   Bengali Love Story   এবং   Funny Jokes in Bengali   পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, আশাকরি গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। Bangla Vuter Golpo Online Reading | ভয়ঙ্কর ভূতের কাহিনি আজকের গল্প - অন্ধকার রাত্রি পর্ব - প্রথম রায় সাহেব থাকেন কলাবাগানে। অনেকখানি ভেতরের দিকে। দেয়ালঘেরা তিন কামরার একতলা একটা বাড়ি। আশেপাশে ছয়-সাততলা বিশাল বাড়ি ঘর উঠে গেছ...

গাওয়া ঘি কাকে বলে? বাসায় কীভাবে খাঁটি ঘি বানানো যায়?

  খাঁটি ঘি কে গাওয়া ঘি বলে। উপকরনঃ দুধের সর- ৫ কেজি পরিমাণ ঠাণ্ডা পানি- ২.৫ লিটার ঘি তৈরির জন্য যা লাগবে- মাটির পাত্র বা মালশা- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) শিল-পাটা- (সর বাটার জন্য) কাঠের চামচ বা খুন্তি- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) প্রনালিঃ ১. প্রথমে দুধের সর নিয়ে নিন আর দুধের সর বাটার জন্য একটি পরিষ্কার শিল-পাটা নিন। এরপরে দুধের সর অল্প পরিমাণে করে শিল-পাটাতে নিয়ে বাটতে থাকুন। বাটার সময় পানি দেয়া যাবেনা। সরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই একবারে সবটুকু একসাথে বাটতে যাবেন না। অল্প অল্প করে সর নিয়ে বেটে নিতে হবে। ২. এবার একটি মাটির পাত্র বা মালশা নিয়ে নিন। তাতে বাটা সর থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে কাঠের চামচ বা খুন্তি দিয়ে ঘুটতে থাকুন। এই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্ভব ততো দ্রুত করতে হবে। ৩. ভাল করে ঘুটা হয়ে গেলে সর থেকে ক্রিম তৈরি হবে। এভাবে বাকি সর থেকেই ক্রিম তৈরি করে নিন। ৪. ক্রিম তৈরি হয়ে গেলে এর মধ্যে ঠাণ্ডা পানি দিতে হবে। ক্রিমের পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিতে হবে।পানি দিয়ে ঘুঁটার পরে ক্রিম থেকে সাদা দুধের মত পানি বের হয়ে ক্রিম পরিষ্কার হয়ে ঘন ডো এর মত উপরে ভেসে উঠতে থাকবে। যখন ক্রিমের সবটুকু ডো...

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য কি?

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য আছে। এরা উভয়ই ছাগলের পুরুষ প্রজাতি তবে জন্মের কিছুদিন পরে যেসব পুরুষ লিঙ্গের ছাগলের অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেওয়া হয় সে সব শাবককেই খাসি বলা হয়। ... আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। আর এর কারন হল অন্ডকোষ কাটলে এরা প্রজনন অক্ষম হয়, ফলে মনযোগ দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফলে খাসি মোটাতাজা হয় এবং খাসির মাংস সুস্বাদু হয়। আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। পাঠা মূলত লবণের ঘাটতি বা চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নিজের ত্যাগকৃত মূত্র নিজেই পান করে থাকে, অনেক সময় উত্তেজনা বসতও সে এই কাজ করে। আর মাদি ছাগলকে আকর্ষিত করতে পুরুষ ছাগল বা পাঠা এর শরির থেকে একটি ক্যামিকেল "4-ethyloctanal" নিঃসরণ করে যা বাতাসে এসে "4-ethyloctanoic acid" এ পরিণত হয় এবং উৎকট গন্ধ ছড়ায় যা অনেকেরই অপছন্দ। এই গন্ধ পাঠার মাংসেও থাকে যার ফলে পাঠার মাংস তেমন জনপ্রিয় না। মাদী ছাগলও গোশতের খুব ন...