Skip to main content

ফজরের পর মহাপুরস্কারের আমল | এক আমলে হজ, জান্নাত ও আল্লাহর সুরক্ষা

 একবার ভাবুন তো, কেমন হবে যদি আপনি আপনার দিনটি মহান আল্লাহর সরাসরি নিরাপত্তায় শুরু করতে পারেন? যদি ফেরেশতারা আপনার ইবাদতের সাক্ষী থাকে? আর যদি ঘরে বসেই একটি পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সওয়াব লাভ করা যায়? অবিশ্বাস্য মনে হলেও, ফজরের নামাজ এবং এর পরের কিছু সহজ আমল মুমিনদের জন্য এমনই মহাপুরস্কারের সুযোগ নিয়ে আসে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করল।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৩৮০)। তাই ফজর শুধু একটি নামাজই নয়, এটি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নবায়ন করার এবং সারাদিনের জন্য সুরক্ষা ও বরকত হাসিলের সেরা মাধ্যম।

চলুন, হাদিসের আলোকে ফজরের পর এমন কিছু আমল সম্পর্কে জেনে নিই, যা আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে।

১. এক আমলে পূর্ণ হজ ও ওমরার সওয়াব

এটি ফজরের পরের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত আমলগুলোর একটি। একটি সহিহ হাদিসে এই বিশাল পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।

করণীয়:

  • ধাপ ১: ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।

  • ধাপ ২: নামাজের স্থানেই বসে সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর জিকির (যেমন: তাসবিহ, তিলাওয়াত, দোয়া) করা।

  • ধাপ ৩: সূর্য ভালোভাবে ওঠার ১৫-২০ মিনিট পর দুই রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করা।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, তারপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকির করে, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি পূর্ণ হজ ও একটি পূর্ণ ওমরার সওয়াব রয়েছে।" রাসূল (সা.) তিনবার জোর দিয়ে বলেন, "পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হজ ও ওমরার সওয়াব)।" (তিরমিজি, হাদিস: ৫৮৬)

২. জান্নাতে প্রবেশের নিশ্চয়তা: আয়াতুল কুরসি

আয়াতুল কুরসিকে কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত বলা হয়। ফরজ নামাজের পর এটি পাঠের পুরস্কার বিশাল।

করণীয়: প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর, বিশেষ করে ফজরের পর আয়াতুল কুরসি ১ বার পাঠ করা।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস: ২৩৯৫)

আয়াতুল কুরসি: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কায়্যূম... (সম্পূর্ণ আয়াত)

৩. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভের দোয়া

দুটি ছোট কিন্তু শক্তিশালী দোয়া ফজরের পর পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তার গুনাহ মাফ করে দেন।

ক) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া

করণীয়: ফজর ও মাগরিবের পর ৩ বার পাঠ করা।

দোয়া: রাজিতু বিল্লাহি রাব্বাওঁ, ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনাওঁ, ওয়া বি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা। অর্থ: আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বিন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

ফজিলত: হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৮৯)

খ) ক্ষমা ও জান্নাতের সনদ: সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার

করণীয়: দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সকালে (ফজরের পর) ও সন্ধ্যায় ১ বার পাঠ করা।

দোয়া: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা... (সম্পূর্ণ দোয়া)

ফজিলত: রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সকালে এই ইস্তিগফার পাঠ করে এবং সন্ধ্যার আগে ইন্তেকাল করে, সে জান্নাতি হবে। (বুখারি, হাদিস: ৬৩০৬)

৪. দুনিয়াবী বিপদ ও রোগ থেকে সুরক্ষা

আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার মাধ্যমে মুমিন দুনিয়ার সব বিপদ, অনিষ্ট এবং রোগব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে পারে।

ক) জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া

করণীয়: ফজর ও মাগরিবের পর ৭ বার পাঠ করা।

দোয়া: আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার। অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন।

ফজিলত: হাদিস অনুযায়ী, এই আমলকারী ওই দিন বা রাতে মারা গেলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৭৯)

খ) কঠিন রোগব্যাধি থেকে রক্ষার দোয়া

করণীয়: ফজর ও মাগরিবের পর পাঠ করা।

দোয়া: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া মিন সায়্যিইল আসক্বাম। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আশ্রয় চাই।

Comments

আরও দেখুন

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ?

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ? যদি বস্তুর ওজন বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজনের চেয়ে বেশী হলে বস্তুটি তরলে ডুবে  যাবে এবং বস্তুর ওজনের চেয়ে বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজন বেশী হলে বস্তুটি তরলে ভেসে থাকবে। তাহলে লোহার টুকরা পানিতে ভাসবে না কেননা লোহার টুকরা দ্বারা অপসারিত পানির ওজন লোহার টুকরার চেয়ে অনেক কম। লোহার জাহাজের ভিতরটা ফাঁপা বলে জাহাজ যে আয়তনের পানি অপসারণ করে তার ওজন জাহাজের ওজনের চেয়ে বেশী। তাই লোহার জাহাজ পানিতে ভাসে।     

চশমা আবিষ্কার

  ভারতীয় স্থপতি দেবনারায়ণের হাতে বিশ্বের প্রথম চশমা তৈরি হয়। এমনটাই দাবি করছেন ঋষিকুমার আগরওয়াল।  চশমা প্রসঙ্গে আদি শঙ্করাচার্যের লেখা অপরোক্ষানুভুতির ৮১তম শ্লোকে বলা হয়েছে- ‘ঠিক যেমন উপনেত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে সব খুব ছোট বস্তুকে/ বড় দেখা যায়, তেমনি ..’ মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে শুরুর থেকে জেনে নিন- আধুনিক চশমার উদ্ভাবক দেশ হিসেবে সাধারণভাবে ইতালির নাম উচ্চারিত হয়। দূরের জিনিসকে চোখের নাগালে নিয়ে আসার জন্য আতস কাচের ব্যবহার করার নজির দ্বাদশ শতকে ইতালিতে পাওয়া গিয়েছিল। বলা হয়, ১২৮৬ সাল নাগাদ ইতালিরই জিওর্দানো দা পিসা নামে জনৈক ব্যক্তি প্রথমবারের মতো চশমা তৈরি করেন। ১৭২৭ সালে আধুনিক চশমার প্রাথমিক নকশা তৈরি করেন ইতালিরই গিরোলামো সাভোনারোলা। পরবর্তীকালে সাভোনারোলার নকশার সূত্রে চশমা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয় এবং তা ধীরে ধীরে আধুনিক রূপ পায়। তবে চশমার উদ্ভাবন নিয়ে ইউরোপিয়ানদের এই দাবী কতটা যথার্থ, তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কারণ, সমসাময়িক এবং আরও পুরনো কিছু হিন্দু সাহিত্যে চশমার প্রসঙ্গ এর আগেই এসেছে। তাহলে কি চশমার জন্ম ভারতে! ‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথ্যালমোলজি’তে ১...

Bhuter Golpo - ভুতের গল্প - অন্ধকার রাত্রি

বয়সে ছোট হোক বা বড়   Bhut   নামটা শোনা মাত্রই আমাদের মনের মধ্যে একটা আলাদা শিহরন বা ভয়ের সৃষ্টি। অথচ মনের মধ্যে শত ভয় থাকা সত্ত্বেও আমরা   Bangla Bhuter Golpo   শুনতে ছাড়তাম না। ছোট বেলায় যেমন দাদু কিংবা ঠাকুমার কাছ থেকে আমরা নানা ধরনের   Vuter Golpo   শুনতাম। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আমরা সবাই কাজের মধ্যে এত ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছি যে কারো কাছে গল্প শোনানোর সময় হয়ে ওঠেনা। তাই আজকে আমার আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একটি সত্যি কারের ভূতের গল্প। গল্প টিকে ৮ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তারই প্রথম ভাগটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আরও   Bengali Love Story   এবং   Funny Jokes in Bengali   পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, আশাকরি গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। Bangla Vuter Golpo Online Reading | ভয়ঙ্কর ভূতের কাহিনি আজকের গল্প - অন্ধকার রাত্রি পর্ব - প্রথম রায় সাহেব থাকেন কলাবাগানে। অনেকখানি ভেতরের দিকে। দেয়ালঘেরা তিন কামরার একতলা একটা বাড়ি। আশেপাশে ছয়-সাততলা বিশাল বাড়ি ঘর উঠে গেছ...

গাওয়া ঘি কাকে বলে? বাসায় কীভাবে খাঁটি ঘি বানানো যায়?

  খাঁটি ঘি কে গাওয়া ঘি বলে। উপকরনঃ দুধের সর- ৫ কেজি পরিমাণ ঠাণ্ডা পানি- ২.৫ লিটার ঘি তৈরির জন্য যা লাগবে- মাটির পাত্র বা মালশা- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) শিল-পাটা- (সর বাটার জন্য) কাঠের চামচ বা খুন্তি- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) প্রনালিঃ ১. প্রথমে দুধের সর নিয়ে নিন আর দুধের সর বাটার জন্য একটি পরিষ্কার শিল-পাটা নিন। এরপরে দুধের সর অল্প পরিমাণে করে শিল-পাটাতে নিয়ে বাটতে থাকুন। বাটার সময় পানি দেয়া যাবেনা। সরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই একবারে সবটুকু একসাথে বাটতে যাবেন না। অল্প অল্প করে সর নিয়ে বেটে নিতে হবে। ২. এবার একটি মাটির পাত্র বা মালশা নিয়ে নিন। তাতে বাটা সর থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে কাঠের চামচ বা খুন্তি দিয়ে ঘুটতে থাকুন। এই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্ভব ততো দ্রুত করতে হবে। ৩. ভাল করে ঘুটা হয়ে গেলে সর থেকে ক্রিম তৈরি হবে। এভাবে বাকি সর থেকেই ক্রিম তৈরি করে নিন। ৪. ক্রিম তৈরি হয়ে গেলে এর মধ্যে ঠাণ্ডা পানি দিতে হবে। ক্রিমের পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিতে হবে।পানি দিয়ে ঘুঁটার পরে ক্রিম থেকে সাদা দুধের মত পানি বের হয়ে ক্রিম পরিষ্কার হয়ে ঘন ডো এর মত উপরে ভেসে উঠতে থাকবে। যখন ক্রিমের সবটুকু ডো...

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য কি?

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য আছে। এরা উভয়ই ছাগলের পুরুষ প্রজাতি তবে জন্মের কিছুদিন পরে যেসব পুরুষ লিঙ্গের ছাগলের অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেওয়া হয় সে সব শাবককেই খাসি বলা হয়। ... আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। আর এর কারন হল অন্ডকোষ কাটলে এরা প্রজনন অক্ষম হয়, ফলে মনযোগ দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফলে খাসি মোটাতাজা হয় এবং খাসির মাংস সুস্বাদু হয়। আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। পাঠা মূলত লবণের ঘাটতি বা চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নিজের ত্যাগকৃত মূত্র নিজেই পান করে থাকে, অনেক সময় উত্তেজনা বসতও সে এই কাজ করে। আর মাদি ছাগলকে আকর্ষিত করতে পুরুষ ছাগল বা পাঠা এর শরির থেকে একটি ক্যামিকেল "4-ethyloctanal" নিঃসরণ করে যা বাতাসে এসে "4-ethyloctanoic acid" এ পরিণত হয় এবং উৎকট গন্ধ ছড়ায় যা অনেকেরই অপছন্দ। এই গন্ধ পাঠার মাংসেও থাকে যার ফলে পাঠার মাংস তেমন জনপ্রিয় না। মাদী ছাগলও গোশতের খুব ন...