Skip to main content

তাহাজ্জুদের সিজদায় পড়ার বিশেষ দোয়া

 সিজদা হলো আল্লাহর সাথে বান্দার সবচেয়ে নিকটবর্তী হওয়ার মুহূর্ত। আর তাহাজ্জুদের সিজদা হলো সেই নৈকট্যের গভীরতম পর্যায়। যখন রাতের নিস্তব্ধতায় весь পৃথিবী ঘুমিয়ে থাকে, তখন একজন মুমিন তার প্রভুর সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। এই অন্তরঙ্গ মুহূর্তে কী বলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে তা সবচেয়ে সুন্দর হয়?

চলুন, আমরা হাদিসের পাতা থেকে জেনে নিই এমন একটি বিশেষ দোয়া সম্পর্কে, যা স্বয়ং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর তাহাজ্জুদের সিজদায় পাঠ করতেন।

সেই রাতের ঘটনা: আয়েশা (রা.) যা দেখলেন

উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা (রা.) এই দোয়াটির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি পড়লে সেই মুহূর্তের পবিত্রতা এবং রাসূল (সা.)-এর বিনয় অন্তরে অনুভূত হয়।

তিনি বলেন, একদিন রাতে আমি ঘুম থেকে জেগে রাসূল (সা.)-কে বিছানায় পেলাম না। আমি ভাবলাম, তিনি হয়তো অন্য কোনো স্ত্রীর কক্ষে গিয়েছেন। আমি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ আমার হাত তাঁর দুই পায়ের ওপর পড়ল। তিনি তখন সিজদারত ছিলেন এবং তাঁর পা দুটি খাড়া ছিল। সেই অবস্থায় তিনি বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে এই দোয়াটি পাঠ করছিলেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৯৩; সহিহ মুসলিম)

দোয়াটি: আরবি, উচ্চারণ ও অর্থ

এই দোয়াটি আল্লাহর প্রতি চূড়ান্ত বিনয় এবং আত্মসমর্পণের এক অসাধারণ প্রকাশ।

আরবি:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ، لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আ'ঊযু বি-রিদ্বা-কা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া বি-মু'আ-ফা-তিকা মিন 'উক্বূ-বাতিকা, ওয়া আ'ঊযু বিকা মিনকা, লা উহ্ছী ছানা-আন 'আলাইকা, আনতা কামা আছনাইতা 'আলা নাফসিকা।

সরল অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চাই, আর আপনার ক্ষমার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি আপনার (পাকড়াও) থেকে আপনার কাছেই আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা করে শেষ করতে পারব না; আপনি ঠিক তেমনই, যেমন প্রশংসা আপনি নিজের জন্য নিজে করেছেন।

দোয়ার অর্থের গভীরতা

এই ছোট দোয়াটির প্রতিটি বাক্য গভীর তাৎপর্য বহন করে:

  • ‘আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চাই’: এখানে বান্দা আল্লাহর একটি গুণ (সন্তুষ্টি) দিয়ে তাঁরই আরেকটি গুণ (অসন্তুষ্টি) থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে। এর অর্থ হলো, "হে আল্লাহ, একমাত্র তুমিই পারো তোমার ক্রোধ থেকে আমাকে বাঁচাতে।"

  • ‘আপনার ক্ষমার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই’: একইভাবে, এখানে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার আশ্রয়ে তাঁর শাস্তি থেকে বাঁচার আকুতি জানানো হচ্ছে।

  • ‘আমি আপনার (পাকড়াও) থেকে আপনার কাছেই আশ্রয় চাই’: এটি বিনয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়। বান্দা স্বীকার করছে যে, আল্লাহ যদি তাকে পাকড়াও করতে চান, তবে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই।

  • ‘আমি আপনার প্রশংসা করে শেষ করতে পারব না...’: এটি চূড়ান্ত স্বীকারোক্তি। বান্দা বলছে, "হে আল্লাহ, আমার জ্ঞান, ভাষা ও ক্ষমতা এতই সীমিত যে, আপনার আসল মহত্ত্ব ও গুণের প্রশংসা করার সাধ্য আমার নেই। আপনার প্রকৃত প্রশংসা তো সেটাই, যা আপনি নিজে নিজের জন্য করেছেন।"

কেন এই দোয়া এত গুরুত্বপূর্ণ?

সিজদা হলো বিনয় ও আত্মসমর্পণের সর্বোচ্চ অবস্থা। আর এই দোয়াটিও হলো বিনয় ও আল্লাহর মহত্ত্বের চূড়ান্ত স্বীকারোক্তি। তাই, সিজদারত অবস্থায় এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক আরও গভীর ও মজবুত হয়।

Comments

আরও দেখুন

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ?

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ? যদি বস্তুর ওজন বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজনের চেয়ে বেশী হলে বস্তুটি তরলে ডুবে  যাবে এবং বস্তুর ওজনের চেয়ে বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজন বেশী হলে বস্তুটি তরলে ভেসে থাকবে। তাহলে লোহার টুকরা পানিতে ভাসবে না কেননা লোহার টুকরা দ্বারা অপসারিত পানির ওজন লোহার টুকরার চেয়ে অনেক কম। লোহার জাহাজের ভিতরটা ফাঁপা বলে জাহাজ যে আয়তনের পানি অপসারণ করে তার ওজন জাহাজের ওজনের চেয়ে বেশী। তাই লোহার জাহাজ পানিতে ভাসে।     

চশমা আবিষ্কার

  ভারতীয় স্থপতি দেবনারায়ণের হাতে বিশ্বের প্রথম চশমা তৈরি হয়। এমনটাই দাবি করছেন ঋষিকুমার আগরওয়াল।  চশমা প্রসঙ্গে আদি শঙ্করাচার্যের লেখা অপরোক্ষানুভুতির ৮১তম শ্লোকে বলা হয়েছে- ‘ঠিক যেমন উপনেত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে সব খুব ছোট বস্তুকে/ বড় দেখা যায়, তেমনি ..’ মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে শুরুর থেকে জেনে নিন- আধুনিক চশমার উদ্ভাবক দেশ হিসেবে সাধারণভাবে ইতালির নাম উচ্চারিত হয়। দূরের জিনিসকে চোখের নাগালে নিয়ে আসার জন্য আতস কাচের ব্যবহার করার নজির দ্বাদশ শতকে ইতালিতে পাওয়া গিয়েছিল। বলা হয়, ১২৮৬ সাল নাগাদ ইতালিরই জিওর্দানো দা পিসা নামে জনৈক ব্যক্তি প্রথমবারের মতো চশমা তৈরি করেন। ১৭২৭ সালে আধুনিক চশমার প্রাথমিক নকশা তৈরি করেন ইতালিরই গিরোলামো সাভোনারোলা। পরবর্তীকালে সাভোনারোলার নকশার সূত্রে চশমা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয় এবং তা ধীরে ধীরে আধুনিক রূপ পায়। তবে চশমার উদ্ভাবন নিয়ে ইউরোপিয়ানদের এই দাবী কতটা যথার্থ, তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কারণ, সমসাময়িক এবং আরও পুরনো কিছু হিন্দু সাহিত্যে চশমার প্রসঙ্গ এর আগেই এসেছে। তাহলে কি চশমার জন্ম ভারতে! ‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথ্যালমোলজি’তে ১...

Bhuter Golpo - ভুতের গল্প - অন্ধকার রাত্রি

বয়সে ছোট হোক বা বড়   Bhut   নামটা শোনা মাত্রই আমাদের মনের মধ্যে একটা আলাদা শিহরন বা ভয়ের সৃষ্টি। অথচ মনের মধ্যে শত ভয় থাকা সত্ত্বেও আমরা   Bangla Bhuter Golpo   শুনতে ছাড়তাম না। ছোট বেলায় যেমন দাদু কিংবা ঠাকুমার কাছ থেকে আমরা নানা ধরনের   Vuter Golpo   শুনতাম। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আমরা সবাই কাজের মধ্যে এত ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছি যে কারো কাছে গল্প শোনানোর সময় হয়ে ওঠেনা। তাই আজকে আমার আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একটি সত্যি কারের ভূতের গল্প। গল্প টিকে ৮ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তারই প্রথম ভাগটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আরও   Bengali Love Story   এবং   Funny Jokes in Bengali   পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, আশাকরি গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। Bangla Vuter Golpo Online Reading | ভয়ঙ্কর ভূতের কাহিনি আজকের গল্প - অন্ধকার রাত্রি পর্ব - প্রথম রায় সাহেব থাকেন কলাবাগানে। অনেকখানি ভেতরের দিকে। দেয়ালঘেরা তিন কামরার একতলা একটা বাড়ি। আশেপাশে ছয়-সাততলা বিশাল বাড়ি ঘর উঠে গেছ...

গাওয়া ঘি কাকে বলে? বাসায় কীভাবে খাঁটি ঘি বানানো যায়?

  খাঁটি ঘি কে গাওয়া ঘি বলে। উপকরনঃ দুধের সর- ৫ কেজি পরিমাণ ঠাণ্ডা পানি- ২.৫ লিটার ঘি তৈরির জন্য যা লাগবে- মাটির পাত্র বা মালশা- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) শিল-পাটা- (সর বাটার জন্য) কাঠের চামচ বা খুন্তি- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) প্রনালিঃ ১. প্রথমে দুধের সর নিয়ে নিন আর দুধের সর বাটার জন্য একটি পরিষ্কার শিল-পাটা নিন। এরপরে দুধের সর অল্প পরিমাণে করে শিল-পাটাতে নিয়ে বাটতে থাকুন। বাটার সময় পানি দেয়া যাবেনা। সরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই একবারে সবটুকু একসাথে বাটতে যাবেন না। অল্প অল্প করে সর নিয়ে বেটে নিতে হবে। ২. এবার একটি মাটির পাত্র বা মালশা নিয়ে নিন। তাতে বাটা সর থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে কাঠের চামচ বা খুন্তি দিয়ে ঘুটতে থাকুন। এই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্ভব ততো দ্রুত করতে হবে। ৩. ভাল করে ঘুটা হয়ে গেলে সর থেকে ক্রিম তৈরি হবে। এভাবে বাকি সর থেকেই ক্রিম তৈরি করে নিন। ৪. ক্রিম তৈরি হয়ে গেলে এর মধ্যে ঠাণ্ডা পানি দিতে হবে। ক্রিমের পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিতে হবে।পানি দিয়ে ঘুঁটার পরে ক্রিম থেকে সাদা দুধের মত পানি বের হয়ে ক্রিম পরিষ্কার হয়ে ঘন ডো এর মত উপরে ভেসে উঠতে থাকবে। যখন ক্রিমের সবটুকু ডো...

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য কি?

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য আছে। এরা উভয়ই ছাগলের পুরুষ প্রজাতি তবে জন্মের কিছুদিন পরে যেসব পুরুষ লিঙ্গের ছাগলের অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেওয়া হয় সে সব শাবককেই খাসি বলা হয়। ... আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। আর এর কারন হল অন্ডকোষ কাটলে এরা প্রজনন অক্ষম হয়, ফলে মনযোগ দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফলে খাসি মোটাতাজা হয় এবং খাসির মাংস সুস্বাদু হয়। আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। পাঠা মূলত লবণের ঘাটতি বা চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নিজের ত্যাগকৃত মূত্র নিজেই পান করে থাকে, অনেক সময় উত্তেজনা বসতও সে এই কাজ করে। আর মাদি ছাগলকে আকর্ষিত করতে পুরুষ ছাগল বা পাঠা এর শরির থেকে একটি ক্যামিকেল "4-ethyloctanal" নিঃসরণ করে যা বাতাসে এসে "4-ethyloctanoic acid" এ পরিণত হয় এবং উৎকট গন্ধ ছড়ায় যা অনেকেরই অপছন্দ। এই গন্ধ পাঠার মাংসেও থাকে যার ফলে পাঠার মাংস তেমন জনপ্রিয় না। মাদী ছাগলও গোশতের খুব ন...