Skip to main content

কেন তাহাজ্জুদ পড়বেন? জেনে নিন এর ৭টি অসামান্য গুরুত্ব ও ফজিলত

 গভীর রাতের নিস্তব্ধতায় যখন পুরো পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে, তখন আপনার সামনে খুলে যায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক গোপন দরজা। সেই দরজার নাম ‘সালাতুত তাহাজ্জুদ’। এটি কেবল একটি নফল নামাজ নয়, বরং এটি মহান রবের সাথে একান্তে কথোপকথন, নিজের চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরার এবং আত্মিক শক্তি অর্জনের এক বিশেষ মুহূর্ত।

অনেকেই জানেন তাহাজ্জুদ পড়া অনেক সওয়াবের কাজ, কিন্তু এর গভীরে কী কী রহস্য ও গুরুত্ব লুকিয়ে আছে? চলুন, জেনে নিই এমন ৭টি কারণ যা আপনাকে তাহাজ্জুদ আদায়ে অনুপ্রাণিত করবে।

১. আল্লাহর সাথে সরাসরি কথোপকথনের সুযোগ

দিনের ব্যস্ততায় আমাদের মন নানা দিকে বিক্ষিপ্ত থাকে। কিন্তু রাতের নিস্তব্ধতায় মন থাকে স্থির। এই সময়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সবচেয়ে কাছে চলে আসেন। এটি শুধু কোনো আধ্যাত্মিক ধারণা নয়, বরং সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“আমাদের রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন: কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে তা দান করব? কে আছে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

ভাবুন তো, স্বয়ং আল্লাহ যেখানে আপনার দোয়া, আপনার চাওয়া শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন, এর চেয়ে বড় সুযোগ আর কী হতে পারে?

২. গোপন সদকার সমতুল্য ইবাদত

দিনে যে নামাজ বা ইবাদত করা হয়, তা অন্যরা দেখতে পায়। একে প্রকাশ্য সদকার সাথে তুলনা করা যায়। কিন্তু রাতের গভীরে যখন আপনি আরামের ঘুম ত্যাগ করে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য দাঁড়ান, তখন সেই ইবাদত কেউ দেখে না। এটি হলো গোপন সদকার মতো। আর আল্লাহর কাছে গোপন ইবাদত ও গোপন সদকার মর্যাদা অনেক বেশি, কারণ এতে রিয়া বা লোক দেখানোর কোনো সুযোগ থাকে না।

৩. আত্মিক শক্তি ও নবুয়তের প্রস্তুতি

কঠিন দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন হয় প্রচণ্ড মানসিক ও আত্মিক শক্তি। আর সেই শক্তি অর্জনের সেরা উপায় হলো তাহাজ্জুদ। মক্কায় যখন রাসূল (সা.)-এর ওপর ইসলামের প্রচারের কঠিন দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছিল, তখন আল্লাহ তাঁকে তাহাজ্জুদ নামাজের আদেশ দেন।

আল্লাহ বলেন, “হে চাদরাবৃত! রাত্রিতে দণ্ডায়মান হও, কিছু অংশ ছাড়া।” (সূরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ১-২)

এটি প্রমাণ করে যে, তাহাজ্জুদ মানুষকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে, জীবনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আত্মবিশ্বাস ও সাহস যোগায়।

৪. দোয়া কবুলের নিশ্চিত সময়

যেহেতু আল্লাহ নিজে এই সময়ে বান্দাকে আহ্বান করেন, তাই এটি দোয়া কবুলের সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ। আপনার মনের যত চাওয়া, যত আকুতি, যত কষ্ট—সবকিছু এই সময়ে সিজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে পেশ করুন। ইনশাআল্লাহ, তিনি আপনার খালি হাত ফিরিয়ে দেবেন না।

৫. গুনাহ মাফ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

তাহাজ্জুদ হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। সারাদিনের ভুল-ত্রুটির জন্য অনুতপ্ত হয়ে দুটি রাকাত নামাজ পড়ে যখন আপনি ক্ষমা চাইবেন, তখন পরম দয়ালু আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন বলে আশা করা যায়। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম সেরা পথ।

৬. শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষা

যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের মাধ্যমে নিজের দিন শুরু করার প্রস্তুতি নেন, তিনি একটি আধ্যাত্মিক বর্ম পরিধান করে ফেলেন। এই নামাজ বান্দাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং কুপ্রবৃত্তির তাড়না থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করে। মনকে রাখে পবিত্র এবং আল্লাহর স্মরণে সজীব।

৭. নবী (সা.)-এর প্রিয় সুন্নত অনুসরণ

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়তেন না। তাঁর পা ফুলে যেত, তবুও তিনি রাতের পর রাত দাঁড়িয়ে থাকতেন। তাঁর এই প্রিয় সুন্নতের অনুসরণ করা—তাঁর প্রতি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। আর যে তাঁর সুন্নতকে ভালোবাসে, সে জান্নাতে তাঁর সাথেই থাকবে।

Comments

আরও দেখুন

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ?

লোহার জাহাজ ভাসে কেন ? যদি বস্তুর ওজন বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজনের চেয়ে বেশী হলে বস্তুটি তরলে ডুবে  যাবে এবং বস্তুর ওজনের চেয়ে বস্তু দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজন বেশী হলে বস্তুটি তরলে ভেসে থাকবে। তাহলে লোহার টুকরা পানিতে ভাসবে না কেননা লোহার টুকরা দ্বারা অপসারিত পানির ওজন লোহার টুকরার চেয়ে অনেক কম। লোহার জাহাজের ভিতরটা ফাঁপা বলে জাহাজ যে আয়তনের পানি অপসারণ করে তার ওজন জাহাজের ওজনের চেয়ে বেশী। তাই লোহার জাহাজ পানিতে ভাসে।     

চশমা আবিষ্কার

  ভারতীয় স্থপতি দেবনারায়ণের হাতে বিশ্বের প্রথম চশমা তৈরি হয়। এমনটাই দাবি করছেন ঋষিকুমার আগরওয়াল।  চশমা প্রসঙ্গে আদি শঙ্করাচার্যের লেখা অপরোক্ষানুভুতির ৮১তম শ্লোকে বলা হয়েছে- ‘ঠিক যেমন উপনেত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে সব খুব ছোট বস্তুকে/ বড় দেখা যায়, তেমনি ..’ মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে শুরুর থেকে জেনে নিন- আধুনিক চশমার উদ্ভাবক দেশ হিসেবে সাধারণভাবে ইতালির নাম উচ্চারিত হয়। দূরের জিনিসকে চোখের নাগালে নিয়ে আসার জন্য আতস কাচের ব্যবহার করার নজির দ্বাদশ শতকে ইতালিতে পাওয়া গিয়েছিল। বলা হয়, ১২৮৬ সাল নাগাদ ইতালিরই জিওর্দানো দা পিসা নামে জনৈক ব্যক্তি প্রথমবারের মতো চশমা তৈরি করেন। ১৭২৭ সালে আধুনিক চশমার প্রাথমিক নকশা তৈরি করেন ইতালিরই গিরোলামো সাভোনারোলা। পরবর্তীকালে সাভোনারোলার নকশার সূত্রে চশমা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয় এবং তা ধীরে ধীরে আধুনিক রূপ পায়। তবে চশমার উদ্ভাবন নিয়ে ইউরোপিয়ানদের এই দাবী কতটা যথার্থ, তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কারণ, সমসাময়িক এবং আরও পুরনো কিছু হিন্দু সাহিত্যে চশমার প্রসঙ্গ এর আগেই এসেছে। তাহলে কি চশমার জন্ম ভারতে! ‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথ্যালমোলজি’তে ১...

Bhuter Golpo - ভুতের গল্প - অন্ধকার রাত্রি

বয়সে ছোট হোক বা বড়   Bhut   নামটা শোনা মাত্রই আমাদের মনের মধ্যে একটা আলাদা শিহরন বা ভয়ের সৃষ্টি। অথচ মনের মধ্যে শত ভয় থাকা সত্ত্বেও আমরা   Bangla Bhuter Golpo   শুনতে ছাড়তাম না। ছোট বেলায় যেমন দাদু কিংবা ঠাকুমার কাছ থেকে আমরা নানা ধরনের   Vuter Golpo   শুনতাম। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আমরা সবাই কাজের মধ্যে এত ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছি যে কারো কাছে গল্প শোনানোর সময় হয়ে ওঠেনা। তাই আজকে আমার আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একটি সত্যি কারের ভূতের গল্প। গল্প টিকে ৮ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তারই প্রথম ভাগটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আরও   Bengali Love Story   এবং   Funny Jokes in Bengali   পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, আশাকরি গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। Bangla Vuter Golpo Online Reading | ভয়ঙ্কর ভূতের কাহিনি আজকের গল্প - অন্ধকার রাত্রি পর্ব - প্রথম রায় সাহেব থাকেন কলাবাগানে। অনেকখানি ভেতরের দিকে। দেয়ালঘেরা তিন কামরার একতলা একটা বাড়ি। আশেপাশে ছয়-সাততলা বিশাল বাড়ি ঘর উঠে গেছ...

গাওয়া ঘি কাকে বলে? বাসায় কীভাবে খাঁটি ঘি বানানো যায়?

  খাঁটি ঘি কে গাওয়া ঘি বলে। উপকরনঃ দুধের সর- ৫ কেজি পরিমাণ ঠাণ্ডা পানি- ২.৫ লিটার ঘি তৈরির জন্য যা লাগবে- মাটির পাত্র বা মালশা- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) শিল-পাটা- (সর বাটার জন্য) কাঠের চামচ বা খুন্তি- ১টি (সর ঘুঁটার জন্য) প্রনালিঃ ১. প্রথমে দুধের সর নিয়ে নিন আর দুধের সর বাটার জন্য একটি পরিষ্কার শিল-পাটা নিন। এরপরে দুধের সর অল্প পরিমাণে করে শিল-পাটাতে নিয়ে বাটতে থাকুন। বাটার সময় পানি দেয়া যাবেনা। সরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই একবারে সবটুকু একসাথে বাটতে যাবেন না। অল্প অল্প করে সর নিয়ে বেটে নিতে হবে। ২. এবার একটি মাটির পাত্র বা মালশা নিয়ে নিন। তাতে বাটা সর থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে কাঠের চামচ বা খুন্তি দিয়ে ঘুটতে থাকুন। এই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্ভব ততো দ্রুত করতে হবে। ৩. ভাল করে ঘুটা হয়ে গেলে সর থেকে ক্রিম তৈরি হবে। এভাবে বাকি সর থেকেই ক্রিম তৈরি করে নিন। ৪. ক্রিম তৈরি হয়ে গেলে এর মধ্যে ঠাণ্ডা পানি দিতে হবে। ক্রিমের পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিতে হবে।পানি দিয়ে ঘুঁটার পরে ক্রিম থেকে সাদা দুধের মত পানি বের হয়ে ক্রিম পরিষ্কার হয়ে ঘন ডো এর মত উপরে ভেসে উঠতে থাকবে। যখন ক্রিমের সবটুকু ডো...

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য কি?

খাসি এবং পাঠার মধ্যে পার্থক্য আছে। এরা উভয়ই ছাগলের পুরুষ প্রজাতি তবে জন্মের কিছুদিন পরে যেসব পুরুষ লিঙ্গের ছাগলের অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেওয়া হয় সে সব শাবককেই খাসি বলা হয়। ... আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। আর এর কারন হল অন্ডকোষ কাটলে এরা প্রজনন অক্ষম হয়, ফলে মনযোগ দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফলে খাসি মোটাতাজা হয় এবং খাসির মাংস সুস্বাদু হয়। আর যেসব শাবক পুরুষ ছাগলের এই অপারেশন হয় না তাদেরকেই পাঠা বলা হয়। তবে এরা না থাকলে ছাগলের আর বংশ বিস্তার হত না এবং ছাগল বিলুপ্ত হয়ে যেত। পাঠা মূলত লবণের ঘাটতি বা চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নিজের ত্যাগকৃত মূত্র নিজেই পান করে থাকে, অনেক সময় উত্তেজনা বসতও সে এই কাজ করে। আর মাদি ছাগলকে আকর্ষিত করতে পুরুষ ছাগল বা পাঠা এর শরির থেকে একটি ক্যামিকেল "4-ethyloctanal" নিঃসরণ করে যা বাতাসে এসে "4-ethyloctanoic acid" এ পরিণত হয় এবং উৎকট গন্ধ ছড়ায় যা অনেকেরই অপছন্দ। এই গন্ধ পাঠার মাংসেও থাকে যার ফলে পাঠার মাংস তেমন জনপ্রিয় না। মাদী ছাগলও গোশতের খুব ন...