না, ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে পর্দা করার নিয়ম একই নয়, যদিও উভয়কেই শালীনতা ও চক্ষুলজ্জা রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্দার মূল উদ্দেশ্য হলো নারী ও পুরুষের মধ্যে ফিতনা (বিশৃঙ্খলা বা প্রলোভন) রোধ করা এবং সমাজের নৈতিক মান বজায় রাখা। এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য উভয় লিঙ্গের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়মাবলী রয়েছে, যা তাদের শারীরিক গঠন, সামাজিক ভূমিকা এবং সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত।
মেয়েদের পর্দা: মেয়েদের জন্য পর্দার বিধান তুলনামূলকভাবে কঠোর। তাদের পুরো শরীর ঢাকা বাধ্যতামূলক, মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি পর্যন্ত ছাড়া (যদিও কিছু মতানুযায়ী মুখমণ্ডলও ঢাকা)। পোশাক ঢিলেঢালা, অস্বচ্ছ এবং আকর্ষণীয় হওয়া যাবে না। এর মূল কারণ হলো, নারীর সৌন্দর্য এমনভাবে প্রকাশ না করা যাতে তা পুরুষদের জন্য প্রলোভন তৈরি করে। এই পর্দার মাধ্যমে নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা হয় এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা হয়। হিজাব বা বোরকা পরা এই পর্দার একটি অংশ। নারী পুরুষের সামনে নিজেদের সাজসজ্জা প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া, মাহরাম (যাদের সাথে বিবাহ হারাম, যেমন বাবা, ভাই, স্বামী) ব্যতীত অন্য পুরুষদের সাথে একাকী হওয়া বা অবাধ মেলামেশা করা নিষিদ্ধ।
পুরুষদের পর্দা: পুরুষদের পর্দার বিধান প্রধানত চক্ষুলজ্জা এবং সতর ঢাকার সাথে সম্পর্কিত। পুরুষদের জন্য সতর নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। অর্থাৎ, এই অংশটুকু ঢাকা বাধ্যতামূলক। পুরুষের জন্য কোনো নির্দিষ্ট পোশাক (যেমন হিজাব) বাধ্যতামূলক নয়, তবে তাদের পোশাকও শালীন ও ঢিলেঢালা হওয়া উচিত। পুরুষদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্দার দিক হলো তাদের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, "মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।" (সূরা নূর, ২৪:৩০)। পুরুষরা কোনো নারীর প্রতি কামুক দৃষ্টিতে তাকানো থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়াও, তাদের এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে যা ফিতনা সৃষ্টি করে, যেমন অহেতুক নারীর সাথে মেলামেশা বা তাদের প্রতি আকর্ষণীয় আচরণ করা।
সংক্ষেপে, মেয়েদের জন্য পর্দা মূলত তাদের শরীর ঢাকার মাধ্যমে এবং ছেলেদের জন্য পর্দা প্রধানত তাদের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। উভয় বিধানই সমাজের নৈতিক সুস্থতা এবং নারী ও পুরুষের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।
Comments
Post a Comment