হ্যাঁ, ইসলামে পুরুষদের জন্য বহুবিবাহ (একসাথে একাধিক স্ত্রী রাখা) জায়েজ, তবে কিছু নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে। কুরআন মজীদে সূরা নিসার ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন অথবা চারজন। আর যদি আশঙ্কা করো যে, সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই বিবাহ করো।" এই আয়াতটি স্পষ্ট করে যে, ইসলামে পুরুষদের জন্য সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি আছে।
তবে, এই অনুমতির সাথে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে: সুবিচার বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। যদি কোনো পুরুষ একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সুবিচার করতে না পারেন, অর্থাৎ তাদের সকলের প্রতি সমান আচরণ করতে না পারেন, তাহলে তার জন্য কেবল একজন স্ত্রী রাখাই বাধ্যতামূলক। সুবিচার বলতে শুধুমাত্র আর্থিক দিক থেকে সমান ভরণপোষণ বোঝায় না, বরং এর মধ্যে মানসিক, আবেগিক এবং সময় প্রদানের ক্ষেত্রেও সমান আচরণ অন্তর্ভুক্ত। প্রতিটি স্ত্রীর প্রতি তার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের মধ্যে কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না।
ইসলামে বহুবিবাহের অনুমতি দেওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা তৎকালীন আরব সমাজ এবং বৃহত্তর মানব সমাজের প্রেক্ষাপটে বিচার্য। যেমন:
যুদ্ধ পরিস্থিতি: যুদ্ধে পুরুষের সংখ্যা কমে গেলে সমাজে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। বহুবিবাহ এক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
নারীর ভরণপোষণ ও নিরাপত্তা: বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত নারীদের ভরণপোষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি উপায় হিসেবে বহুবিবাহ কাজ করতে পারে।
বংশ বৃদ্ধি: যদি একজন স্ত্রীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা না থাকে, তবে বংশ বৃদ্ধির জন্য পুরুষ দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারে।
ব্যক্তিগত প্রয়োজন: কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে পুরুষের ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও এটি অনুমোদিত হতে পারে, তবে তা অবশ্যই সুবিচারের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসলামে বহুবিবাহ কোনো বাধ্যতামূলক প্রথা নয়, বরং একটি শর্তসাপেক্ষ অনুমতি। সুবিচারের শর্ত এতটাই কঠিন যে, অনেক পন্ডিত মনে করেন এটি বেশিরভাগ পুরুষের পক্ষেই পূরণ করা কঠিন। এই কারণে, বর্তমানে অনেক মুসলিম দেশেই বহুবিবাহের ক্ষেত্রে কঠোর আইনকানুন রয়েছে এবং এটি সাধারণত খুব বেশি প্রচলিত নয়।
Comments
Post a Comment