-->

বাঁশ কোড়লের উপকারিতা?

 

একে অপরকে ক্ষতি করার ক্ষেত্রে কিংবা উপহাস করে হলেও প্রচলিত জনপ্রিয় ধারার একটি শব্দ হলো বাঁশ।

তবে পাহাড়ি অঞ্চলে কিন্তু এই বাঁশই খাওয়া হয়। স্থানীয় উপায়ে রান্না করা বাঁশ কোড়ল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমন শরীরের জন্যও বেশ উপকারী।

মারমারা একে বলে ‘মহ্ই’ আর ত্রিপুরাদের কাছে ‘মেওয়া’।চাকমা ভাষায় বলা হয় ‘বাচ্ছুরি’।

মূলত বাঁশের গোঁড়ার কচি নরম অংশকে বলা হয় বাঁশ কোড়ল(Bamboo Shoot)। পার্বত্যাঞ্চলের প্রায় সব স্থানেই মেলে এ সবজির দেখা মেলে।

পার্বত্য বিভিন্ন অঞ্চলে মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়।

বিভিন্ন জাতের বাঁশ কোড়ল স্বাদে ভিন্ন। তবে মুলি বাঁশ কোড়ল সবচেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় সবার কাছে এটি জনপ্রিয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা ও দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি।

চীনে বাঁশের কোড়লকে “স্বাস্থ্যকর খাবারের রাজা” বলা হয়। দৈহিক সুস্থতায় এর কোনো জুড়ি মেলা ভার।

এবার জেনে নেয়া যাক বাঁশের কোড়ল এর পুষ্টিগুণ এবং এর উপকারিতা সম্বন্ধে.....

United States Department of Agriculture এর তথ্য মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁশের কোড়ল থেকে ২৭ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় এই যে, এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই।তাছাড়া এটি ফাইবারের একটি ভালো উৎসও বটে।তাই যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা এটি নির্দ্বিধায় খেতে পারেন।

এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁশের কোড়লে আছেঃ

★প্রোটিন : ২.৬ গ্রাম

★সোডিয়াম : ০৪ গ্রাম

★চিনি : ০৩ গ্রাম

★কার্বোহাইড্রেট : ০৫ গ্রাম

★পটাশিয়াম : ৫৩৩ মিলিগ্রাম

★ফ্যাট বা চর্বি : ০.৩ গ্রাম

ভিটামিন বি-০৬ এ ভরপুর এই কোড়ল রয়েছে ভিটামিন এ ,ভিটামিন ই,থায়ামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ,পটাশিয়াম ,ফসফরাস ,কপার ,জিংক ম্যাঙ্গানিজ ,রিবোফ্লাভিনসহ অত্যাবশ্যকীয় সব উপাদান

বাঁশের কোড়লের যত উপকারিতা:-

১.হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ-

বাঁশের কোড়লে রয়েছে উপকারী সব উপাদান যা দেহের কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

২.রক্তচাপ রাখে নিয়ন্ত্রণেঃ-

দেহের রক্তচাপের মাত্রা কমায় এটি। যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী একটি খাবার হলো বাঁশ কোড়ল। এটি ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়।

৩.কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করেঃ-

হজমজনিত সমস্যা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন? খাবার তালিকায় রাখুন বাঁশ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে দারুণ কার্যকর।

৪.জরায়ু সংকোচনে বাঁধা দেয়াঃ-

বাঁশের কোড়াল জরায়ুর সংকোচনকে উত্তেজিত করে স্বাভাবিক প্রসবের সময় সহায়তা করে।চীনের ঐতিহ্য গত চিকিৎসা ব্যবস্থায় গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে গর্ভবতী মহিলাদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সুবিধার্থে বাঁশের কোড়ল দিয়ে তৈরি খাবার অল্প পরিমাণে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।

৫.এন্টিভেনামঃ-

ভারতে সাপ,কাঁকড়া বিছে এবং বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ের চিকিৎসায় এটির জুস ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে।

৬.নানা রোগের নিরাময়ঃ-

হাঁপানি, ডায়াবেটিস, তীব্র জ্বর, মূর্ছা যাওয়া, মৃগী রোগ ইত্যাদি নিরাময়ে যথেষ্ট উপকার করে এই বাঁশের কোড়ল।

তাই যেকোনো সবজির সাথে তুলনা করলে বাঁশের কোঁড়ল কিন্তু কোনোভাবেই হেলাফেলার পাত্র নয়।

সতর্কতাঃ-

বাঁশের কোড়লে প্রাকৃতিকভাবেই "Cyanogenic glycosides" নামক একটি বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি থাকে।

কোড়ল ছোট ছোট আকারের কেটে পানিতে সেদ্ধ করলে বিষাক্ত পদার্থটি ধ্বংস হয়ে যায়।

এছাড়াও "canning process" এর মাধ্যমেও বিষাক্ত উপাদান টি ধ্বংস করা যায়।

আর এই বিষয়ে আরো পরিষ্কার ধারণা নেয়ার জন্য একজন পুষ্টিবিদ বা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। এটাই শ্রেয় হবে।

>