বাচ্চারা আরেকটা বাচ্চার খেলনা পছন্দ হলেই কেন কেড়ে নিয়ে নেয়?
বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করে এর উত্তর খুঁজে বের করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায়, একটি বাচ্চা পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেলে ওর সাথে সাথে ওর পাশে থাকা বাচ্চাটাও কাঁদতে আরম্ভ করে!! উদ্বিগ্নতা আর দুশ্চিন্তায় ওর গুলু গুলু মুখখানা ছেয়ে যায়!!! হোপ নামের আমেরিকান এক শিশুকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সে তার সাথে থাকা বাচ্চার রোদন বন্ধ করতে তার নিজের মাকে ওর কাছে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে!!!! আবার মাইকেল নামের এক শিশু তার নিজের খেলনা দিয়ে তার পাশে রোদনরত বাচ্চাটির ক্রন্দন থামানোর চেষ্টা করেছে!!!! এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চাটির কান্না থেমে গেলেও ওর চোখে মুখে উদ্বগ্নতা বিরাজ করে!!! প্রশ্ন আসতে পারে, কি হাবিজাবি উত্তর দিচ্ছি আমি?! আপাতত প্রশ্নের সাথে উত্তরের কোনো সামঞ্জস্য না পাওয়া গেলেও খেলনা কেড়ে নিয়ে যাওয়ার কারণ আর এগুলো করার পেছেনের কারণ কিন্তু একটাই!! সেটা হলো Empathy.
জেনে রাখা ভালো যে, Sympathy আর Empathy এর মাঝে অর্থগত মিল থাকলেও বিষয় দুটোর মধ্যে খানিকটা ফারাক রয়েছে। Sympathy বলতে সহানুভূতি প্রকাশ করাকে বোঝানো হয়। আর Empathy বলতে বোঝানো হয় অন্যের অনুভূতিকে নিজের অনুভূতি ভেবে বা ভুক্তভোগীর জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে ওভাবে ট্রিট করা বা সহানুভূতি প্রকাশ করা।
শিশুদের মধ্যে মাত্র তিন মাস বয়স থেকে গড়ে ওঠে এই সহানুভূতিপ্রবণতা বা empathy. বিভিন্ন সময়ে মনোবিজ্ঞানীরা নিরীক্ষণ করে দেখেছেন যে কোনো শিশুর মা যদি শিশুকে কাছে রেখে চোখের জল ফেলে, তখন শিশুটি নিজের কোপল নিজেই মোছার চেষ্টা করে,যদিও তার চোখে কোনো জল নেই (এ ধরণের অনুভূতিকে বলা হয়ে থাকে motor mimicry) !!! কারণ এসময়ে তার এই বোধোদয় হয় না যে, সে অন্যদের থেকে আলাদা একটা ব্যক্তিত্ব। এই বুঝ তার মধ্যে না থাকার কারণে সে অপরের দুঃখকে নিজের দুঃখ মনে করে, আরেক পিচ্চির হাসিকে নিজের হাসির কারণ বানিয়ে নেয়। এমনকি আরেকজনের খেলনাকেও নিজের খেলনা ভাবতে শুরু করে!!!! দেখেছেন, কি চমৎকার!!! শিশুদের মধ্যে এধরণের অনুভূতি প্রায় আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত বিরাজ করে। অতঃপর সে বুঝতে শুরু করে যে সে অন্যদের থেকে ভিন্ন এক ব্যক্তিত্ব।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চাকালে যারা বেশি empathetic আচরণ করে, বড় হয়ে তারা অধিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও সহানুভূতিশীল হয়। আপনারা যারা ছোট বাচ্চাদের অভিবাবক (মা, বাবা কিংবা বড় ভাইবোন) আছেন, তারা বাচ্চাদের এই সহানুভূতিশীল আচরণ বজায় রাখতে সহায়তা করবেন। শিশুদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। আমি মনে করি প্রত্যেকটা মানুষের empathetic আচরণ শেখা জরুরি। বাচ্চারা যখন মারামারি করবে একে অপরের সাথে, তখন তাদেরকে আমরা বলি "দুষ্টামি করো না বাবু!!"; কিন্তু একই জায়গায় আপনি যদি বলেন, "দেখো বাবু, তোমার জন্য তোমার ঐ বন্ধুটার কত কষ্ট হচ্ছে!!", তাহলে সে আবারও ধীরে ধীরে empathetic হওয়া শুরু করবে। গড়ে উঠবে এক অপূর্ব ব্যক্তিত্ব।
কষ্ট করে উত্তরটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন। বাচ্চাদের আদর করবেন।
Post a Comment