-->

গ্যালভানিক কোষ ও তড়িৎ-বিশ্লেষ্য কোষের মধ্যে পার্থক্য কী?


গ্যালভানিক কোষ ও তড়িৎ-বিশ্লেষ্য কোষের মধ্যে পার্থক্য কী?


গ্যালভানিক কোষে রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয় অপরদিকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে তড়িৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয়।

প্রশ্ন হলো - দুইটা কোষেই অ্যানোড এবং ক্যাথোড তড়িৎদ্বার প্রয়োজন। আমরা জানি, অ্যানোড এ জারণ ঘটে এবং ক্যাথোডে বিজারণ ঘটে। এই ঘটনা দুটি কোষের তড়িৎদ্বার এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু গ্যালভানিক কোষে অ্যানোড নেগেটিভ ও ক্যাথোড পজিটিভ হলেও তড়িৎবিশ্লেষ্য কোষে ঠিক উল্টো অর্থাৎ অ্যানোড পজেটিভ এবং ক্যাথোড নেগেটিভ হয়।

তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষের ক্ষেত্রে :

অ্যানোডে অ্যানায়ন ইলেক্ট্রন ছাড়বে।
ক্যাথোডে ক্যাটায়ন ইলেক্ট্রন ধরবে।

অ্যানায়ন মানেই যার চার্জ নেগেটিভ কারন সে ইলেক্ট্রন গ্রহন করে (ফলে অতিরিক্ত ইলেক্ট্রন বহন করে আনার ফলে ইলেক্ট্রন বেশী থাকে )

ক্যাটায়ন মানেই যার চার্জ পজেটিভ কারন সে ইলেক্ট্রন বর্জন করে ( ফলে তার যে ইলেক্ট্রন যা থাকা দরকার তার চেয়ে কম থাকে )

এখন জারন মানে ছাড়ন আর বিজারণ মানে গ্রহন। তাই অ্যানায়ন অ্যানোডে ব্যতীত ইলেক্ট্রন ছাড়তে পারবে না এবং ক্যাটায়ন ক্যাথোড ব্যতীত ইলেক্ট্রন ধরতে / সংগ্রহ করতে পারবে না। যেহেতু বিপরীত ধর্মী চার্জ একে অপর কে টানে তাই অবশ্যই নেগেটিভ অ্যানায়ন কে পজেটিভ তড়িৎদ্বার এ ধাবিত হতে হবে এবং যেহেতু আমরা তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে ব্যাটারির মাধ্যমে বাইরে থেকে তড়িৎ শক্তি প্রদান করব তাই ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তই হবে অ্যানোড এবং সেখানেই অ্যানায়ন ইলেক্ট্রন ছেড়ে জারিত হবে। তাই তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে অ্যানোড পজিটিভ। অপর দিকে, পজেটিভ ক্যাটায়নকে নেগেটিভ তড়িৎদ্বার এ ধাবিত হতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে ব্যাটারির নেগেটিভ প্রান্তই হবে ক্যাথোড এবং সেখানেই ক্যাটায়ন ইলেক্ট্রন গ্রহন করে বিজারিত হবে। তাই তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষে ক্যাথোড নেগেটিভ।



বিজ্ঞানের মজার সব প্রশ্ন গুলো জানুন আমাদের নতুন ব্লগ থেকে। দেখুন এখানে- ক্লিক করুন





গ্যালভানিক কোষের ক্ষেত্রে:

অ্যানোডে হবে মৌলের ইলেক্ট্রন ছাড়ন .

ক্যাথোডে হবে আয়নিত মৌলের ইলেক্ট্রন গ্রহন .

এই কোষে তড়িৎদ্বার সক্রিয় ভাবেই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। এবং এই কোষে তড়িৎ বিশ্লেষন ঘটানো হয় না। কিন্তু তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ ও তড়িৎদ্বার সম্মিলিত ভাবে রাসায়ানিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তর করে। সক্রিয়তার মাত্রা অনুসারে যেই তড়িৎদ্বারে ব্যবহৃত মৌলের সক্রিয়তার মাত্রা বেশি সেটা অ্যানোড রুপে এবং যার সক্রিয়তার মাত্রা কম তা ক্যাথোড রুপে গণ্য হয়। যেহেতু তড়িৎ দ্বার রাসায়ানিক বিক্রিয়ায় অংশ নেই তাই উচ্চ সক্রিয় তড়িৎদ্বার কতৃক জারণ সংগঠিত হয় এবং এই জন্যেই অ্যানোড এ ইলেক্ট্রন মেঘ জমে কারন অ্যানোড দন্ড ইলেক্ট্রন ছাড়তে থাকে আর সেই ইলেক্ট্রন গুলো ইলেক্ট্রনিক পরিবাহির মধ্যে দিয়ে ক্যাথোডে ধাবিত হয় আর অ্যানোডে ব্যবহৃত মৌল আয়ন রুপে দ্রবণে আসে এবং এই ইলেক্ট্রন ক্যাথোড শুধু মাত্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে সরবরাহ করে। ফলে সেখানে অবস্থিত ক্যাটায়ন কতৃক তা গৃহিত হয় এবং বিজারিত মৌল রুপে তা দ্রবণে থাকতে না পেরে ক্যাথোডে জমা পরে। যেহেতু অ্যানোডে ইলেক্ট্রন উৎপন্ন হয় তাই অ্যানোড নেগেটিভ ( ইলেক্ট্রনের চার্জ নেগেটিভ ) এবং ক্যাথোডে পজেটিভ হয় বলেই সেই নেগেটিভ ইলেক্ট্রন বিপরীত ধর্মী ক্যাথোডে ধাবিত হয়। এই ঘটনা বর্তনী পূর্ণ করলেই কেবল ঘটে। যেহেতু মুক্ত ইলেক্ট্রন এর প্রবাহই তড়িৎ তাই গ্যালভানিক কোষ এর মাধ্যমে তড়িৎ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষের তড়িৎদ্বার গঠনে দুটি তড়িৎদ্বার ব্যাটারির পজিটিভ ও নেগেটিভ প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হয় যা শুধু ইলেক্ট্রনিক পরিবাহি ও তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহীর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে কিন্তু রাসায়ানিক বিক্রিয়ায় অংশ নেই না। তাই নিষ্ক্রিয় ধাতুর তড়িৎদ্বার ব্যবহার করা হয় এবং সক্রিয়তার কোন পার্থক্য থাকে না তড়িৎদ্বার দুটির মধ্যে শুধুমাত্র ইলেক্ট্রন প্রবাহের মাধ্যমে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ বিশ্লেষণ ঘটানো হয়।

অপরদিকে, গ্যলাভানিক কোষের তড়িৎদ্বার গঠনে সক্রিয়তার মাত্রা দ্বারা দুটি তড়িৎদ্বার নিরুপিত হয় এবং এদের প্রত্যেক কেই আলাদা ভাবে নিজ নিজ লবণের ( তড়িৎ বিশ্লেষ্য দ্রবণ ) দ্রবণে দ্রবীভুত করা হয়। এবং এই কোষে উচ্চ সক্রিয় তড়িৎদ্বার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয় এবং নিম্ন শক্তির তড়িৎদ্বার উক্ত তড়িৎদ্বারের তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ কে রাসায়ানিক বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহনে ইলেক্ট্রন পরিবহন করে সহায়তা করে।


>